২০০০ বছর ধরে জমা বরফ গলে যাচ্ছে ২৫ বছরে

পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। তার অনতিদূরেই রয়েছে ‘সাউথ কল’ হিমবাহ। যে হিমবাহে বরফ জমতে লেগে গিয়েছে সহস্রাব্দ। সেই বরফই গলছে মাত্র তিন দশকের মধ্যে।

আর মানবসৃষ্ট জলবায়ু সংকটের কারণেই হিমালয়কে এই ভয়াবহ ক্ষয় মেনে নিতে হচ্ছে বলে উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়। 

যুক্তরাষ্ট্রের মেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে গত ২৫ বছরে সাউথ কল হিমবাহটি গলেছে প্রায় ৫৫ মিটার। 

নতুন এই গবেষণা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বিশ্বের পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞদের। এভারেস্ট চূড়ায় এভাবে হিমবাহ গলে যাওয়া বড় ধরনের বিপর্যয়ের সংকেত। বিশ্বের ১৬০ কোটি মানুষের খাবার পানি, সেচের পানি, জলবিদ্যুত উৎপাদনের স্রোত- সব ওই হিমবাহ গলা পানি থেকেই আসে।

বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী নেচার পোর্টফোলিও জার্নাল ক্লাইমেট অ্যান্ড অ্যাটমসফেরিক সায়েন্সে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে গবেষকেরা দাবি করেছেন, হিমবাহ গলার বিষয়ে অনেক গবেষণা হলেও বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়ার হিমবাহগুলোর বিষয়ে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

এই গবেষণা বলছে, প্রায় দুই হাজার বছর পুরনো হিমবাহের বরফ জমতে যে সময় লেগেছে, তার ৮০ গুণ বেগে তা গলে পাতলা হচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে, আগামী কয়েক দশকের মধ্যে মাউন্ট এভারেস্টের সর্বোচ্চ হিমবাহ বিলীন হয়ে যাবে। 

‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক পল মায়েস্কি বলেন, এই পরিবর্তন মারাত্মক ও অভূতপূর্ব।

প্রসঙ্গত, মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতম এই হিমবাহটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৬ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত। আর বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ থেকে এর দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। এই গবেষণাকে সমর্থন করেছেন একাধিক পরিবেশবিদ। তাদের বক্তব্য, শুধু মাউন্ট এভারেস্টই নয়, হিমালয়ে অবস্থিত প্রায় প্রত্যেকটি হিমবাহের অবস্থা একই রকম। সবগুলোই দ্রুত গলছে।

হিমবাহ গলতে থাকার ফল সুদূরপ্রসারী। ইতিমধ্যে হিমালয়ের পাদদেশগুলোতে একের পর এক হ্রদের সৃষ্টি হচ্ছে। যা অচিরে বন্যা ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। 

এই প্রসঙ্গে ২৫ বার এভারেস্টে উঠে রেকর্ড গড়া কমি রিতা শেরপা বলেছেন, তিনি স্বচক্ষে হিমালয়ের এই পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, আগে যেখানে পুরু বরফ দেখেছি, সেখানে এখন প্রায় কিছুই নেই! দ্রুত হারে হিমালয়ের বরফ গলছে। এটা উদ্বেগের মতো বিষয় তো বটেই।

গবেষকদের মতে, মাউন্ট এভারেস্টের এই হিমবাহ ধ্বংসের ফল হবে মারাত্মক। এশিয়া মহাদেশের পানীয় জল, খাদ্য ও জীবিকা সঙ্কটের মুখে পড়বে। শুধু যে হিমবাহ গলছে তাই নয়, এত দিন ধরে যে তুষার আচ্ছাদিত পৃষ্ঠ হিমালয়ের ভারসাম্য রক্ষা করছে, সেটিও নষ্ট হচ্ছে।

গবেষকরা বলছেন, মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখরে পড়ছে এবং এটা যে বরফাচ্ছাদিত পৃষ্ঠের ভারসাম্য নষ্ট করছে, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত। হিমবাহের বরফ একবার উন্মুক্ত হয়ে পড়লে সেখান থেকে ৫৫ মিটার উঁচু বরফের মজুদ মাত্র ২৫ বছরেই গলে যায়। 

গবেষকেরা বলছেন, ওই হিমবাচের বরফ সম্ভবত ১৯৫০ এর দশক থেকে গলতে শুরু করেছে, কিন্তু ১৯৯০ এর পর তা অতি দ্রুত গলছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //